banglarsab.com

সোমবার, ২২ নভেম্বর, ২০২১

বন্যা ১৯৮৮

 

                                                                        

প্রকৃতির ভয়াবহ তান্ডব  করতালি দিয়ে সর্বনাশী ডাক দিয়ে বিপদসংকুলে পতিত করেছিল। আমাদের সুজলা, সুফলা, শস্য শ্যামলা লাখো শহীদের রক্তে প্রবাহিত স্বাধীনতাকামী বাংলাদেশকে ডুবিয়ে দিয়েছিল। সেই সর্বগ্রাসীর ছোবল আজও আমার মনে পড়ে অভাবনীয় স্মতিও রেখে গেছে ভয়াবহ বন্যা। কেউ এই বন্যায় অচৈতন্য নয়। জানা আছে তার হিংসাত্বক তান্ডবলীলা। মনের কোনে যে অজস্র বেদনা জমে আছে তা লিখতে আমার কলমের ডগায় এসে বন্যার দুস্কর্মের ফলাফল আটকে যায়। কেননা মানবকুলের আর্তনাদ কলমের গতিরোধ করে। কলমও তার কর্ম ছেড়ে আর্তনাদে যোগ দিতে চায়। শো শো শব্দে শুরু হয়ে গেল বন্যার ছোবল। কেউ ভাবেনি, ভাবতেও পারেনি হঠাত এত পানি এসে তাদের তলিয়ে দেবে। বন্যার প্রকোপ আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে তবুও স্বাধীন দেশের সরল মানব আশায় বুব বেধেঁ বসেছিল করালগ্রাস থেকে বাঁচতে। কিন্তু বিধির বিধান করালগ্রাসী বন্যা কাউকে রেহাই দিল না। নিম্নাঞ্চল থেকে শুরু করে অনেক গ্রাম অনেক  বাড়িতে হাহাকার পড়ে যায় চতুর্দিক। সেই মায়াময়, স্মৃতিময় পল্লীতে আমি ছিলাম নির্বিকার।  মানুষ বাড়ি ছেড়ে রাস্তা এবং বিদ্যালয় প্রাংগনে আশ্রয় নেয়। আমাদের বাড়িটা ছিল তুলনামূলক  উচুঁ জায়গায়, আত্বীয়-স্বজন গৃহহারা অনেকেই আমাদের বাড়ি আাশ্রয় নেয়। জায়গার সংকুলান না হওয়ায় বাবা মসজিদের পাশে তাদেরকে ছাপড়া করে দেয়। তখন আমি আইএসসি পরীক্ষা সমাপ্ত করে বাড়িতেই সময় কাটাতেছিলাম। আর মনের আনন্দে মাছ ধরতেছিলাম, আমি বন্যার প্রকোপে ব্যথিত হলেও মাছ ধরতে খুব ভাল লাগছিল।

ঝিমঝাম বসে না থেকে আমাদের সমিতির সবাইকে মিটিং এ ডেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হল আটা কিনে ত্রান কার্যে বেরিয়ে পড়ব চরান্চলে। সিদ্ধান্ত মোতাবেক পরদিন আটা কিনে বেরিয়ে পড়লাম চক্ষুপটে যাহা ধরা পড়ল, তা প্রকাশ করতে বড্ড দুঃখ লাগছে। অনেকে কলাগাছের ভেলা বানিয়ে তার উপর মানুষ, গরু, ছাগল নিয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে, কোথায় তাদের ঠিকানা। আটা দিয়ে কি করবে রুটি তৈরী করার মত অবস্থা তাদের নেই। আমরা তাড়াতাড়ি ফিরে এলাম রুটি তৈরী করে নেওয়ার জন্য। কয়েকজন মিলে রুটি তৈরীতে লেগে গেলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমার। রুটি নিয়ে মানব সেবায় নিয়োজিত হতে পারলাম না। হঠাৎই খবর পেলাম আমার ইমিডিয়েট বড়বোন দুই বাচ্চাসহ আজ দুদিন ঘরের মাচায় বসে দিন গুজরাচ্ছে, খানাপিনা নেই, এখন চললাম তাদের উদ্ধার করে আনতে। হেঁটেই চলেছি মেঠো ভাংগা ভাংগা পথে, কোথাও ভিজে আবার কোথাও সাঁকো বেয়ে। ভগ্নিপতির বাড়ির একমাইল দুর থেকেই দেখতে পেলাম, তাদের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা ডুবে গেছে। বহমান বন্যার স্রোত বইয়ে যাচ্ছে বিদুতের মত। চমকে উঠলাম, ভাবলাম ওরা হয়তঃ আর বেঁচে নেই। সময় যতই হচ্ছে ততই বিপদ বাড়ছে  বলে ভাবানুকুল হয়ে উজানে গিয়ে মরনবাজি করে সাঁতার দিলাম। ভাসতে ভাসতে দু'ঘন্টা পর তাদের ঘরের দুয়ারে, উঠানে পা রাখলাম আমি একবুক পানিতে দাঁড়ানো। ভগ্নিপতি ব্যবসায়ী, ব্যবসার কাজে হয়তঃ কোথাও আটকা পড়েছে। সোহাগিনী বোনকে যে অবস্থায়  পেলাম, মনটা হুহু করে কেঁদে উঠল। বাচ্চা দুটো ক্ষুধার তাড়নায় নড়তে পারছে না, বোনের চোখ দুটো কুটরাগত। আমাকে দেখে তার কান্নায় ভেংগে পড়ল। আমার আগমনের বিবরন জানতে চাইলে তাদের কথার তোয়াক্কা না করে কলাগাছ কেটে ভেলা বানাইতে থাকি। ভাগ্নের বয়স ছিল সাত বছর, সে কাদঁছে, ক্ষিধেয় কথা বলতে পারছিল না। ভেলা তৈরী শেষ করে তাদের উঠিয়ে নিয়ে কিছুদুর ধাক্কিয়ে উজান দিকে গিয়ে আবার আমিও ভেলায় উঠে তাদের নিয়ে পারি জমাত থাকি। সন্ধ্যে হল বড় রাস্তার সন্ধান পেতে। সেখান থেকেও আমাদের বাড়ি তিনমাইল দুরে। সকলেই ক্ষুধায় পাগল হয়ে যাওয়ার পালা। একটা দোকান পেলাম, সেখানেও তেমন কিছু ছিল না, বিস্কুট কিনে বাচ্চাদের দিলাম, ততক্ষনে বাচ্চারা একটু স্বস্তিবোধ করল। আর একমাইল দুর আমার মামাবাড়ি ভেবেছিলাম সেখানে রাত্রি যাপন করে সকালে বাড়ি যাব। নির্মম প্রকৃতির অসম পরিহাস। একটু এগুতেই দেখি সামনে একটা ব্রীজ ভেংগে যাবার উপক্রম হয়ে পড়েছে পানির ধাক্কায়। পানির প্রবল স্রোত ব্রীজের কোল ঘেষে চলেছে। তড়িঘড়ি বাচ্চা দুটো আর তার মাকে পার করে দিলাম। ব্রিবকেসটা  ঐপারে ছিল, তাদের দাঁড় করিয়ে আমি ব্রিবকেসটা আনতে ওপারে গেলাম। ব্রিবকেস নিয়ে পার হতেই বিকট শব্দে ব্রীজ ভেংগে স্রোত এসে

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন