দুরন্ত, খেয়ালীপনা,ন্যায্যমনা,স্পর্শকাতর গ্রাম্য সহজ সরল পরিবেশে যার জন্ম তারই নাম শিমুল। নামের সংগে তার দৈহিক এবং মানসিক চরিত্রের একান্তই মিল খুজেঁ পাওয়া দুস্প্রাপ্য নয়। শিমুল গাছের লম্বা ফুলের কলির মত লম্বা, এমনি লাল ফুলের মত টগবগে চেহারা। যে কোন প্রতিভাময়ীর সংগে সাক্ষাৎ মিললেই নিঃশংকোচে বলবে এমন সাধাসিধে বলেই বসার সাথে তার মনোভাব। যে তাকে কটাক্ষ দৃষ্টি বা কথায় একটু আঘাত হেনেছে, তার সাথে ক্ষনিকের জন্য আঁড়ি। চোখের আড়াল হওয়া মাত্রই শিমুলের কষ্ট শেষ। ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েদের সাথে তার খুব ভাব। তের কি চৌদ্দ বছর হবে, বেশ শিমুল বৃক্ষের ন্যায় লম্বা। অষ্টম শ্রেনী পড়ুয়া ছাত্রী। স্কুলে যেতে তার বেশ অনীহা, তন্মধ্যে গরীব চাষাভুষা ঘরে জন্ম তার। তবে বংশ মর্যাদায় অনেক উর্ধ্বে। তার দাদার পিতামহ একসময় জমিদার ছিল, তাই বলে এলাকার লোকজন তাদেরকে দরিদ্র হলেও সম্মান করে থাকেন। শিমুল লাল শাড়ি, লালব্লাউজ, লাল পেডিকোট এবং মাথায় দুটি বেনী বেঁধে দৌঁড়াতে ভালবাসে। বাবা মা সর্বক্ষন ভীতসন্ত্রন্ত কোন সময় পাগলী মেয়েটা কি করে বসে বলা মুশকিল। কারন দেখতে সুন্দর। অতি চঞ্চল, গাছে উঠে চুপটি মেরে বসে থাকা তার জন্য অতি আনন্দায়ক।
বর্ষাকাল রাস্তার দু'ধারে ঘন জংগল, পায়ে হাঁটা রাস্তা। শিমুল একটা গাছে উঠে অদৃশ্যাবস্থায় বসে আছে, আকাশে মেঘের গর্জন বৃষ্টি পড়ার উপক্রম হতে চলেছে। এরই মাঝে গ্রাম্য মোড়ল ইয়াদ আলী সংগে তার চামচা বল্টু সেই রাস্তা দিয়া দ্রুত হেঁটে যাচ্ছে। অল্প বুদ্ধিমান শিমুল তাকে ভয় দেখানোর জন্য লাফ দিয়ে সামনে পড়ে। মোড়ল সাহেব তো ভয়ে রাস্তায় শুয়ে পড়েছে, বল্টুর চিল্লানো শুনে মোড়ল চোখ খুলে দেখে শিমুল মনের আনন্দে খিলখিলিয়ে হাসছে আর পিছু হটছে।
বল্টুঃ মোড়ল সাব ভয় পাবেন না, এতো জ্বিন ভূত নয়। মোড়লঃ তাহলে কে রে?
বল্টুঃ আবিরের মেয়ে শিমুল।
মোড়লঃ ও আচ্ছা, আমার ছোট গিন্নি ! বেকুব আমাকে আগে বলবি না।
এদিকে শিমুল হাসতে হাসতে মরিয়া হয়ে উঠছে আর পিছন দিকে পিছাচ্ছে।
বল্টুঃ মোড়ল সাব আপনি একে ঘরনী করতে পারলে তাহলে আর আপনাকে রাতবিরাত বাইরে যেতে হবে না, সারাক্ষন ঘুমিয়ে কাটাতে পারবেন।
মোড়লঃ এই শোন! যেওনা, তোমার সাথে আমার কথা আছে, পীরিতের কথা।
শিমুল তো হাসতে হাসতে পাগল প্রায়।
শিমুলঃ ভয় পেয়েছেন মোড়ল কাকা ?
মোড়লঃ ভয় পাব কেন তুমি তো আমার প্রানপাখি এসো আমার কাছে এসো।
এই বলে মোড়ল তাকে ধরতে গেলে শিমুল দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা করে দৌঁড়ে পালাতে গিয়ে শিমুল মোড়লেরই ছেলে বিপুলের সংগে ধাক্কা লেগে যায়। বিপুল ঢাকা থেকে আসতেছিল বাড়ির অভিমুখে। সচকিত বিপুল হতভম্ব হয়ে যায়।
বিপুলঃ এই মেয়ে এত জোরে দৌড়াচ্ছ কেন? কি হয়েছে ?
শিমুলঃ দেখছেন না মোড়ল কাকা আমাকে ধরতে আইছে।
বিপুলঃ কোন মোড়ল ?
শিমুলঃ কেন আপনার বাবা!
বিপুলঃ আমার বাবা তোমাকে দৌঁড়াবে বা ধরবে কেন ?
শিমুল হাসতে হাসতে বলছে, সহজ সরল মেয়ে তো তার ভিতরে রাগ বা গোস্বা কিছু নেই, নেই কোন কটাক্ষ দৃষ্টি।
শিমুলঃ আমি নাকি তার ছোট গিন্নি। তাই আমাকে ধরতে আসছে।
এই বলে শিমুল আবারও দৌঁড় দিতে চাইলে-
বিপুলঃ শোন মেয়ে আমি থাকতে তোমার কোন ভয় নাই, দরকার হলে আমি বাবার সাথে লড়াই করব।
শিমুল তার কথা কর্নপাত না করে তার কাছ থেকে দৌঁড়ে পালাল। বিপুল ভাবছে নিশ্চয় পাগলীটাকে বাবা খারাপ কিছু বলেছে, নতুবা এমন উন্মাদনায় তাকে সে কখনও দেখিনি। কিছুদূর এগুতেই মোড়ল তার সামনে পড়ে। বিপুলের মনটা ভারী কিন্তু মোড়ল মনে মনে ভয় নিয়েও ছেলেকে বলল
মোড়লঃ কেমন আছ বাবা ? কখন আসলে? কিভাবে আসলে? খবর দিলে গাড়ি পাঠাতাম।
এতগুলো প্রশ্নের মধ্যে বিপুল মাত্র বলল
বিপুলঃ ভাল আছি।
এই কথাটা বলে পাশ কাটিয়ে যেতে চাইলে, মোড়ল টের পায় পাগলীটা হয়তঃ কিছু বলেছে। এই ভেবে সে এগুতে থাকে।
মোড়লঃ কিরে বল্টু ঘটনা বুঝি খারাপ।
বল্টুঃ ও কিছু না মোড়ল সাব। পাগলীর কথায় কান দিবে না আপনার স্বনাম ধন্য ছেলে।
মোড়লঃ পাগলী যে কখনও মিথ্যা কথা বলে না এ সত্যটা শিক্ষিত ছেলেরা ভাল করেই বুঝে।