banglarsab.com

বুধবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২১

শিমুল

 


দুরন্ত, খেয়ালীপনা,ন্যায্যমনা,স্পর্শকাতর গ্রাম্য সহজ সরল পরিবেশে যার জন্ম তারই নাম শিমুল।  নামের সংগে তার দৈহিক এবং মানসিক চরিত্রের একান্তই মিল খুজেঁ পাওয়া দুস্প্রাপ্য নয়।  শিমুল গাছের লম্বা ফুলের কলির মত লম্বা, এমনি লাল ফুলের মত টগবগে চেহারা। যে কোন প্রতিভাময়ীর সংগে সাক্ষাৎ মিললেই নিঃশংকোচে বলবে এমন সাধাসিধে বলেই বসার সাথে তার মনোভাব। যে তাকে কটাক্ষ দৃষ্টি বা কথায় একটু আঘাত হেনেছে, তার সাথে ক্ষনিকের জন্য আঁড়ি। চোখের আড়াল হওয়া মাত্রই শিমুলের কষ্ট শেষ। ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েদের সাথে তার খুব ভাব। তের কি চৌদ্দ বছর হবে, বেশ শিমুল বৃক্ষের ন্যায় লম্বা। অষ্টম শ্রেনী পড়ুয়া ছাত্রী। স্কুলে যেতে তার বেশ অনীহা, তন্মধ্যে গরীব চাষাভুষা ঘরে জন্ম তার। তবে বংশ মর্যাদায় অনেক উর্ধ্বে। তার দাদার পিতামহ একসময় জমিদার ছিল, তাই বলে এলাকার লোকজন তাদেরকে দরিদ্র হলেও সম্মান করে থাকেন। শিমুল লাল শাড়ি, লালব্লাউজ, লাল পেডিকোট এবং মাথায় দুটি বেনী বেঁধে দৌঁড়াতে ভালবাসে। বাবা মা সর্বক্ষন ভীতসন্ত্রন্ত কোন সময় পাগলী মেয়েটা কি করে বসে বলা মুশকিল। কারন দেখতে সুন্দর। অতি চঞ্চল, গাছে উঠে চুপটি মেরে বসে থাকা তার জন্য অতি আনন্দায়ক। 

বর্ষাকাল রাস্তার দু'ধারে ঘন জংগল, পায়ে হাঁটা রাস্তা। শিমুল একটা গাছে উঠে অদৃশ্যাবস্থায় বসে আছে, আকাশে মেঘের গর্জন বৃষ্টি পড়ার উপক্রম হতে চলেছে। এরই মাঝে গ্রাম্য মোড়ল ইয়াদ আলী সংগে তার চামচা বল্টু সেই রাস্তা দিয়া দ্রুত হেঁটে যাচ্ছে। অল্প বুদ্ধিমান শিমুল তাকে ভয় দেখানোর জন্য লাফ দিয়ে সামনে পড়ে। মোড়ল সাহেব তো ভয়ে রাস্তায় শুয়ে পড়েছে, বল্টুর চিল্লানো শুনে মোড়ল চোখ খুলে দেখে শিমুল মনের আনন্দে খিলখিলিয়ে হাসছে আর পিছু হটছে।

বল্টুঃ মোড়ল সাব ভয় পাবেন না, এতো জ্বিন ভূত নয়। মোড়লঃ তাহলে কে রে? 

বল্টুঃ আবিরের মেয়ে শিমুল।

মোড়লঃ ও আচ্ছা, আমার ছোট গিন্নি ! বেকুব আমাকে আগে বলবি না।

এদিকে শিমুল হাসতে হাসতে মরিয়া হয়ে উঠছে আর পিছন দিকে পিছাচ্ছে।

বল্টুঃ মোড়ল সাব আপনি একে ঘরনী করতে পারলে তাহলে আর আপনাকে রাতবিরাত বাইরে যেতে হবে না, সারাক্ষন ঘুমিয়ে কাটাতে পারবেন।

মোড়লঃ এই শোন! যেওনা, তোমার সাথে আমার কথা আছে, পীরিতের কথা।

শিমুল তো হাসতে হাসতে পাগল প্রায়।

শিমুলঃ ভয় পেয়েছেন মোড়ল কাকা ? 

মোড়লঃ ভয় পাব কেন তুমি তো আমার প্রানপাখি এসো আমার কাছে এসো।

এই বলে মোড়ল তাকে ধরতে গেলে শিমুল  দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা করে দৌঁড়ে পালাতে গিয়ে শিমুল মোড়লেরই ছেলে বিপুলের সংগে ধাক্কা লেগে যায়। বিপুল ঢাকা থেকে আসতেছিল বাড়ির অভিমুখে। সচকিত বিপুল হতভম্ব হয়ে যায়।

 বিপুলঃ এই মেয়ে এত জোরে দৌড়াচ্ছ কেন? কি হয়েছে ? 

শিমুলঃ দেখছেন না মোড়ল কাকা আমাকে ধরতে আইছে।

বিপুলঃ কোন মোড়ল ? 

শিমুলঃ কেন আপনার বাবা! 

বিপুলঃ আমার বাবা তোমাকে দৌঁড়াবে বা ধরবে কেন ? 

শিমুল হাসতে হাসতে বলছে, সহজ সরল মেয়ে তো তার ভিতরে রাগ বা গোস্বা কিছু নেই, নেই কোন কটাক্ষ দৃষ্টি।

শিমুলঃ আমি নাকি তার ছোট গিন্নি। তাই আমাকে ধরতে আসছে।

এই বলে শিমুল আবারও দৌঁড় দিতে চাইলে-

বিপুলঃ শোন মেয়ে আমি থাকতে তোমার কোন ভয় নাই, দরকার হলে আমি বাবার সাথে লড়াই করব।

শিমুল তার কথা কর্নপাত না করে তার কাছ থেকে দৌঁড়ে পালাল। বিপুল ভাবছে নিশ্চয় পাগলীটাকে বাবা খারাপ কিছু বলেছে, নতুবা এমন উন্মাদনায় তাকে সে কখনও দেখিনি। কিছুদূর এগুতেই মোড়ল তার সামনে পড়ে। বিপুলের মনটা ভারী কিন্তু মোড়ল মনে মনে ভয় নিয়েও  ছেলেকে বলল

মোড়লঃ কেমন আছ বাবা ? কখন আসলে? কিভাবে আসলে? খবর দিলে গাড়ি পাঠাতাম।

এতগুলো প্রশ্নের মধ্যে বিপুল মাত্র বলল 

বিপুলঃ ভাল আছি।

এই কথাটা বলে পাশ কাটিয়ে যেতে চাইলে, মোড়ল টের পায় পাগলীটা হয়তঃ কিছু বলেছে। এই ভেবে সে এগুতে থাকে। 

মোড়লঃ কিরে বল্টু ঘটনা বুঝি খারাপ। 

বল্টুঃ ও কিছু না মোড়ল সাব। পাগলীর কথায় কান দিবে না আপনার স্বনাম ধন্য ছেলে।

মোড়লঃ পাগলী যে কখনও মিথ্যা কথা বলে না এ সত্যটা শিক্ষিত ছেলেরা ভাল করেই বুঝে।

 


সোমবার, ২২ নভেম্বর, ২০২১

বন্যা ১৯৮৮

 

                                                                        

প্রকৃতির ভয়াবহ তান্ডব  করতালি দিয়ে সর্বনাশী ডাক দিয়ে বিপদসংকুলে পতিত করেছিল। আমাদের সুজলা, সুফলা, শস্য শ্যামলা লাখো শহীদের রক্তে প্রবাহিত স্বাধীনতাকামী বাংলাদেশকে ডুবিয়ে দিয়েছিল। সেই সর্বগ্রাসীর ছোবল আজও আমার মনে পড়ে অভাবনীয় স্মতিও রেখে গেছে ভয়াবহ বন্যা। কেউ এই বন্যায় অচৈতন্য নয়। জানা আছে তার হিংসাত্বক তান্ডবলীলা। মনের কোনে যে অজস্র বেদনা জমে আছে তা লিখতে আমার কলমের ডগায় এসে বন্যার দুস্কর্মের ফলাফল আটকে যায়। কেননা মানবকুলের আর্তনাদ কলমের গতিরোধ করে। কলমও তার কর্ম ছেড়ে আর্তনাদে যোগ দিতে চায়। শো শো শব্দে শুরু হয়ে গেল বন্যার ছোবল। কেউ ভাবেনি, ভাবতেও পারেনি হঠাত এত পানি এসে তাদের তলিয়ে দেবে। বন্যার প্রকোপ আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে তবুও স্বাধীন দেশের সরল মানব আশায় বুব বেধেঁ বসেছিল করালগ্রাস থেকে বাঁচতে। কিন্তু বিধির বিধান করালগ্রাসী বন্যা কাউকে রেহাই দিল না। নিম্নাঞ্চল থেকে শুরু করে অনেক গ্রাম অনেক  বাড়িতে হাহাকার পড়ে যায় চতুর্দিক। সেই মায়াময়, স্মৃতিময় পল্লীতে আমি ছিলাম নির্বিকার।  মানুষ বাড়ি ছেড়ে রাস্তা এবং বিদ্যালয় প্রাংগনে আশ্রয় নেয়। আমাদের বাড়িটা ছিল তুলনামূলক  উচুঁ জায়গায়, আত্বীয়-স্বজন গৃহহারা অনেকেই আমাদের বাড়ি আাশ্রয় নেয়। জায়গার সংকুলান না হওয়ায় বাবা মসজিদের পাশে তাদেরকে ছাপড়া করে দেয়। তখন আমি আইএসসি পরীক্ষা সমাপ্ত করে বাড়িতেই সময় কাটাতেছিলাম। আর মনের আনন্দে মাছ ধরতেছিলাম, আমি বন্যার প্রকোপে ব্যথিত হলেও মাছ ধরতে খুব ভাল লাগছিল।

ঝিমঝাম বসে না থেকে আমাদের সমিতির সবাইকে মিটিং এ ডেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হল আটা কিনে ত্রান কার্যে বেরিয়ে পড়ব চরান্চলে। সিদ্ধান্ত মোতাবেক পরদিন আটা কিনে বেরিয়ে পড়লাম চক্ষুপটে যাহা ধরা পড়ল, তা প্রকাশ করতে বড্ড দুঃখ লাগছে। অনেকে কলাগাছের ভেলা বানিয়ে তার উপর মানুষ, গরু, ছাগল নিয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে, কোথায় তাদের ঠিকানা। আটা দিয়ে কি করবে রুটি তৈরী করার মত অবস্থা তাদের নেই। আমরা তাড়াতাড়ি ফিরে এলাম রুটি তৈরী করে নেওয়ার জন্য। কয়েকজন মিলে রুটি তৈরীতে লেগে গেলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমার। রুটি নিয়ে মানব সেবায় নিয়োজিত হতে পারলাম না। হঠাৎই খবর পেলাম আমার ইমিডিয়েট বড়বোন দুই বাচ্চাসহ আজ দুদিন ঘরের মাচায় বসে দিন গুজরাচ্ছে, খানাপিনা নেই, এখন চললাম তাদের উদ্ধার করে আনতে। হেঁটেই চলেছি মেঠো ভাংগা ভাংগা পথে, কোথাও ভিজে আবার কোথাও সাঁকো বেয়ে। ভগ্নিপতির বাড়ির একমাইল দুর থেকেই দেখতে পেলাম, তাদের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা ডুবে গেছে। বহমান বন্যার স্রোত বইয়ে যাচ্ছে বিদুতের মত। চমকে উঠলাম, ভাবলাম ওরা হয়তঃ আর বেঁচে নেই। সময় যতই হচ্ছে ততই বিপদ বাড়ছে  বলে ভাবানুকুল হয়ে উজানে গিয়ে মরনবাজি করে সাঁতার দিলাম। ভাসতে ভাসতে দু'ঘন্টা পর তাদের ঘরের দুয়ারে, উঠানে পা রাখলাম আমি একবুক পানিতে দাঁড়ানো। ভগ্নিপতি ব্যবসায়ী, ব্যবসার কাজে হয়তঃ কোথাও আটকা পড়েছে। সোহাগিনী বোনকে যে অবস্থায়  পেলাম, মনটা হুহু করে কেঁদে উঠল। বাচ্চা দুটো ক্ষুধার তাড়নায় নড়তে পারছে না, বোনের চোখ দুটো কুটরাগত। আমাকে দেখে তার কান্নায় ভেংগে পড়ল। আমার আগমনের বিবরন জানতে চাইলে তাদের কথার তোয়াক্কা না করে কলাগাছ কেটে ভেলা বানাইতে থাকি। ভাগ্নের বয়স ছিল সাত বছর, সে কাদঁছে, ক্ষিধেয় কথা বলতে পারছিল না। ভেলা তৈরী শেষ করে তাদের উঠিয়ে নিয়ে কিছুদুর ধাক্কিয়ে উজান দিকে গিয়ে আবার আমিও ভেলায় উঠে তাদের নিয়ে পারি জমাত থাকি। সন্ধ্যে হল বড় রাস্তার সন্ধান পেতে। সেখান থেকেও আমাদের বাড়ি তিনমাইল দুরে। সকলেই ক্ষুধায় পাগল হয়ে যাওয়ার পালা। একটা দোকান পেলাম, সেখানেও তেমন কিছু ছিল না, বিস্কুট কিনে বাচ্চাদের দিলাম, ততক্ষনে বাচ্চারা একটু স্বস্তিবোধ করল। আর একমাইল দুর আমার মামাবাড়ি ভেবেছিলাম সেখানে রাত্রি যাপন করে সকালে বাড়ি যাব। নির্মম প্রকৃতির অসম পরিহাস। একটু এগুতেই দেখি সামনে একটা ব্রীজ ভেংগে যাবার উপক্রম হয়ে পড়েছে পানির ধাক্কায়। পানির প্রবল স্রোত ব্রীজের কোল ঘেষে চলেছে। তড়িঘড়ি বাচ্চা দুটো আর তার মাকে পার করে দিলাম। ব্রিবকেসটা  ঐপারে ছিল, তাদের দাঁড় করিয়ে আমি ব্রিবকেসটা আনতে ওপারে গেলাম। ব্রিবকেস নিয়ে পার হতেই বিকট শব্দে ব্রীজ ভেংগে স্রোত এসে

শনিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২১

LOVE SMS

 

                                                                           

 * why r u silent ? 

* how are u dear ? 

* how do u do dear ? 

*4 ever beautifull thing makes a beautifull moment, 4 ever our romantic emotion gives the best feeling.

* Look at me, i am a beautifull girl, my dress colour is white I am coming in ur imagine. I am always with u, mind it. I see you always because u with me. Good evening dear.

* Now I am coming to U. I will set with you.

* What do you mean 10 nos ? I m ur lover? I think that love is! Want u. U r my life. I will marry u. Dnt forget me, moner majhe tumi. U r my heart. What do u mean by love ?

 * I will love u when you are done be a good job

* Never shall down my jaan. I will love you   very much from heart all time.

* Love is blind. Life is kind.

শুক্রবার, ১২ নভেম্বর, ২০২১

POORNESS-1

 No one is alone, everyone is included in the bondage of all, or as is customary. Three eras have passed since today. We will discuss what is called the cry of deprivation in human life, no one will hate, it is the responsibility of everyone to know the way of life of the poor three ages ago, because it is impossible to understand how happy the great Lord Almighty has kept us in the present age. Starting the story. The whole country and the whole village is silent in the fascination of the torrential rain of all rainy season around. Rain during that period meant not feeding the poor. For seven days, ten days, the fields would be filled with rain, and with it the wailing of the poor

কষ্টের দিন-১

                                                                             

 কেউ তো নয় একেলা সকলেই সকলের তরে বাঁধনে অন্তর্ভূক্ত বা গতানুগতিকভাবে এ ধরায় চলমান। আজ থেকে তিন যুগ পেরিয়ে গেছে। মানব জীবনে অভাবের হাহাকার কাকে বলে তাই নিয়ে আলোচনা করব, কেউ ঘৃনা করবেন না, তিনযুগ আগে গরীবদের জীবন যাপন কেমন ছিল সেই ধারনা জানতে পারা সকলের দায়িত্ব, কারন বর্তমান যুগে মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের কত সুখে রেখেছেন তা পিছনে না গেলে বুঝা যায়না। গল্প শুরু করছি। চতুর্দিকে ভাদ্র মাসের ঝনঝনানি বৃষ্টির মোহে পুরো দেশ তথা গোটা গ্রামবাসী নিস্তব্ধ। সেই আমলে বৃষ্টি মানেই  গরীবদের না খেয়ে থাকা। চলমান সাতদিন, দশদিন বৃষ্টিতে মাঠঘাট ভরে যেত, তার সাথে চলত গরীবের আহাজারি।  কোন খাদ্যদ্রব্য সংগ্রহে না থাকায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্তনাদে আকাশ বাতাস কম্পিত হত। সেই সময় আমি ছিলাম সেই করুন দৈন্যদশার হিতাকাংখী। আজও মনে পড়লে গাঁ শিউরে উঠে।  মনে হয়  সেদিনগুলো আল্লাহ্ আমাদের গজব হিসেবে দানিত করেছিল। আমি তার পুরো স্বাদটা গ্রহন করেছিলাম। রাত হলে বৃষ্টির মোহে মনে হত পুরো গ্রামটা ভূতের গলিতে রুপান্তর হত, থেমে থেমে বৃষ্টি আবার কখনও লাগাতার  বৃষ্টি পড়ে থাকতো। একদা রাত দশটা হবে তবু সেটা আনুমানিকভাবে বলছি, কান্নার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে আমার বাবা শুনেই বলল কার যেন মরন হল। মা বাবাকে বললেন বাবাকে বাইরে বেরিয়ে দেখার জন্য। বাবা হতাশ হৃদয়ে বলল "নিজের পরিবার নিয়েই তো বড্ড চিন্তিত আবার অন্যের যন্ত্রণা কাঁধে নিয়ে আরও উদ্বিগ্ন বাড়াতে চাই না। মায়াবী মা আমার বাবাকে রেহাই দিলেন না। তাকে জোর করে বাইরে যেতে বাধ্য করলেন। সেই মূহূর্তটা আমার কাছে এমন ছিল যে, হায়রে কুলাংগার মানবজীন, এত কষ্টের ভারে কেউ কারো বিপদে সাড়া দিতে চায়না। কারন আমার বাবাও তো আমাদের সাত ভাই বোন নিয়ে বড্ড হাহাকারে নিমজ্জিত, আমরাও তাকে খানার জন্য তার পিছনে ঘ্যানর ঘ্যানর করছি। হতাশাক্রান্ত বাবা একটা পলিথিন মুড়ে, কাছা দিয়ে, হাতে একটা মগ বাতি নিয়ে বেরিয়ে গেল। মা অবশ্য বলেছিল আমাকে সাথে নেওয়ার জন্য, কিন্তু বাবা অতি কষ্টের সাথে বললেন না ক্ষুধার্ত ছেলেটিকে ঐ হতাশ পরিবারের হতাশ দেখিয়ে আরও বিভ্রান্ত করতে চাইনা।

বাবা চলে যাবার পর আমার তো ঘুম আসছে না, কারন দিনে শুনেছিলাম বিবির বাবা খেটে খাওয়া মানুষটি খুবই অসুস্থ তাছাড়া বৃষ্টির লাগাতার কল্যানে তো বেশ তিন/চারদিন না খেয়ে আরও দুর্বল হয়ে পড়েছিল। আমি ভেবেছি তাই হয়তঃ উনি ইন্তেকাল করেছেন। বিবি হল আমার গ্রাম্য বান্ধবী, পড়াশোনা করছে না, তবে একসাথে খেলাধূলা, একসাথে মাছধরা, একসাথে মক্তবে যাওয়া, গাছে উঠে আম পেরে খাওয়া, দৌঁড়ে বেড়ানোর সাথী। আমি বড্ড চিন্তিত হলাম, মনে হচ্ছিল আমি কি করতে পারি আমাকে যেতেই হবে। এদিকে মা ঘুমায়নি, কুপি নিভিয়ে চুপচাপ শুয়ে আছেন। আমি বিছানা ছেড়ে আস্তে আস্তে উঠলাম, বাঁশের বেড়ার দরজা হালকা খুলে এক দৌঁড় দিলাম, বিবিদের ঘরের দরজায় গিয়ে দাঁড়ালাম। ঘরের ভিতরে অনেক মানুষের শব্দ,কোলাহলে আমার কান্না আসছিল, ঘরে ঢুকেই দেখি বিবিসহ তার আরও দুইবোন, তিনভাই মিলে কান্নার রুল তুলেছে। বাবা আমাকে দেখে খুব কষ্ট পেলেন, কারন অন্ধকার রাতে আমি কিভাবে উপস্থিত হলাম। বিবির মাকে আমরা মাওই বলে সম্বোধন করতাম, কারন বিবির বাবার নাম আর আমার বাবার নাম একি ছিল। 'মা'ওই সাব আমায় বুকে নিয়ে সেকি কান্না গলাজুড়ে। আমার মনে হচ্ছিল, আল্লাহ্ কেন আমাদের গরীব বানাল, ভাবলাম বৃষ্টিকে ধরতে পারলে কল্লাটা ছিড়ে ফেলতাম, অতি কষ্টে মন থেকে কথাগুলো বের হচ্ছিল, আর কাদঁতেছিলাম বিবির মার সাথে অজুড়ে। এক পর্যায়ে তালই সাব অর্থাৎ বিবির বাবা হতাশ হৃদয়ে বলে উঠল 'পানি দাও পানি খাব'  তারাতারি তাকে পানি পান করানো হল। উনি অনেক লোকের সমাগম দেখে চীৎকার করে বলল, আমাকে দেখে লাভ নেই, তোমরা বৃষ্টির বিরুদ্ধে মিছিল কর, আর আল্লাহ্ কে স্বরন কর'। যাহোক এমতাবস্থায় একজনকে দেখতে পেলাম, কি যেন পুটলা বেঁধে নিয়ে ঘরে প্রবেশ করল। পুটলা বহনকৃত লোকটিকে সন্দেহ হল, কারন উনি সুবিধাবাদী, স্বার্থ ছাড়া কাউকে উপকার করেনা। তথাপি ক্ষনিকের জন্য সবাই আস্বস্ত হলাম, কারন একটা পরিবার অন্ততঃ হাফ ছেড়ে আজকের মত বেঁচে যাক।