banglarsab.com

মঙ্গলবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২১

মানবী না দানবী

 পৃথিবীটা সৃষ্টি করেছেন মহানুভব সৃষ্টিকর্তা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্নরুপে রুপান্তরিত করে। রাখাল ভাইয়ের ভাটিয়ালী গান, গরুর গাড়ির ক্যাঁচ ক্যাঁচ, দোয়েল, কোয়েল, ময়না, শ্যামা এবং টুনটুনির গান তাছাড়া কোকিলের কুহুতান এই মনোমুগ্ধকর পরিবেশে শুধুই ইচ্ছা করে সাধনার সাধক হয়ে প্রকৃতির স্বাদ গ্রহন করতে। ইচ্ছা থাকা সত্বেও তা সম্ভব হয়নি, কোনকালে। কারন কর্মই বড় ঝুট ঝামেলা। সৌন্দর্যের প্রাচুর্যতায় ভরা এই পৃথিবীতে আমরা শুধু  কর্মের পিছনে ছুটছি তো ছুটছি। ভাগ্যের বিড়ম্বনায় কখন জানি আশা পুরন হবে তা নিয়েই চিন্তাদগ্ধ। 

আমার বড় ইচ্ছা ছিল, প্রকৃতির দাবানলে একদিন একাধারে ঘুরে বেড়াব এবং তা নিয়ে বিশাল কিছু লিখব। কিন্তু তা আর হল কোথায়? কথায় বলে কিনা আশায় গুড়েবালি হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। ইচ্ছার কমতি ছিলনা, আমার ঘুরার একটি সুযোগ ছিল। আমার দুলাভাইয়ের বড়বড় নৌকা ছিল, যেগুলো দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভাড়ায় চলত। দুলাভাই রুক্ষ মেজাজী এবং ন্যায়পরায়ন ব্যক্তি ছিল।

একদা সাহস করে বললাম"পরীক্ষা শেষ এখন আপনার নৌকায় বহুদুরে বেড়াতে যাব" উনি রেগে ক্ষীন কন্ঠে উত্তর চাইলেন, তা কেথায় বেড়াতে যাবেন স্যার! উত্তরে সুযোগ নিয়ে বললাম চট্রগ্রাম যাব। তিনি কথা না বাড়িয়ে রাজি হয়ে গেলেন। কারন এর আগেও দুএকবার অনুরোধ করেছিলাম, সেজন্য বাড়াবাড়ি না করে এবার রাজি হয়ে গেলেন। আমাকে যথারীতি মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে বললেন। মহাখুশীতে আত্বহারা হয়ে যথারীতি প্রস্তুতি গ্রহন করলাম। আমার নেওয়ার মত যা কিছু ছিল তা গুছিয়ে দুলাভাইকে জানালাম। উনি রেগে এবং ঠাট্রার ছলে বললেন কোন মেয়ে টেয়ে গুছাওনি তো? সেদিনই তাকে দেখেছিলাম এ কথাটা বলার পর হাসতে এবং আমাকে একটা সময় দিয়ে বললেন ঘাটে হাজির হতে।

নির্ধারিত সময়ে নৌকা ঘাটে ভিড়াবার পূর্বেই আমি ঘাটে উপস্থিত হলাম, সাথে ছিল আমার একটি বিড়াল ছানা আর একটি টিয়া পাখি। দুলাভাই এগুলো দেখে মন খারাপ করতে চেয়েছিল, কিন্তু মাকে দেখে আর কিছু বলতে পারেনি। নৌকার মাঝি ছয়জন, আর একজন বাবুর্চি আমাকে নিয়া মোট আটজন সদস্য। দুলাভাইয়ের নিষেধ করার কিছু কারন নিহিত ছিল, মাঝে মধ্যেই নৌকায় ডাকাত দল ঝাপিয়ে পড়ত, আবার টাকা পয়সা না পেলে মাঝিদের মারধর করত। এই ভয়ে এতদিন আমাকে যেতে বারন করেছিল।আমার যাতে কোন প্রকার অসুবিধে না হয় সে বিষয়ে মাঝিদের বারবার সতর্ক করে দিল। নৌকা চলছে উজান বেয়ে আমার খুশীর অন্ত নেই। কাংখিত ভ্রমনে বেরুতে পেরেছি। মাঝিরা গুন টেনে নৌকা এগুচ্ছে এখনও ঘাটে দাঁড়ানো মা, সাজু এবং দুলাভাইকে দেখা যাচ্ছে। মাঝিরা গুন টেনে নৌকা চালালেও তাদের ফুর্তির অন্ত ছিল না। কিন্তু আমার খুব কষ্ট লাগছিল। তখনও নৌকায় ইন্জিন লাগানোর যুগে আমার পদার্পন করিনি। তাই তাদের পরিশ্রম আমার গায়ে বিধতেছিল। 

নৌকা খুব ধীরে ধীরে এগুচ্ছিল, ইতিমধ্যেই সন্ধ্যা হতে চলল। আমার ভালই লাগছিল, নদীর মধ্যে সন্ধ্যে হওয়াটা, নৌকা ভিড়াল একটা ঝুপের কাছে। রাতে গুন টেনে নৌকা চালানো দায় তাই তারা বিশ্রামের জন্য নৌকা নোঙর করল। বাবুর্চি এসে খানার আইটেম জানতে চাইলে আমি এক বাটি মুরগির মাংস বের করে দিলাম। বাবুর্চি হেসে বলল এটা তো আপনার জন্য, আমরা কি খাব! তাই হেড মাঝির কাছে জানতে হবে বাজারে যাবে কিনা, আমি বললাম আজ সবাই মুরগী খাবে, আগামীকাল মাছ, পরশু গরুর মাংস, তারপরদিন হাঁস, আবার মুরগী, তারপর আপনারা যা খাবেন তাই আমিও খাব ওকে। এটা শুনে সবাই খুশি হল, যথার্থ উক্তিতে ভরিয়ে তুলল, নৌকায় যেন নতুন দিন ফিরে পেলাম।

বিড়াল আর টিয়া পাখিকে সময়মত খানা দিচ্ছি, তারাও মনে হল ফুর্তিতেই আছে। আমরা যার যার প্রয়োজন সেরে রাতের খানা নিয়ে বসে পড়লাম। খানা খেতে ভালই লাগল, নৌকার মাঝে মাঝিদের রান্না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন